তখন আকাশের উঁচু আলিসায়
ঝড়ে ভেজা এক কাকের মত
প্রহর ঝিমোয়।
সেদিনের কথা ভুলি নি, কি করে ভুলিঃ
রোদে তেতে ওঠা রমনার পথে ঘূর্ণি হাওয়া,
বটের শীতল ছায়ায় ছায়ায় দমকা হাওয়া,
রক্ত মিছিল।
বুলেটের মুখে কচি তাজা প্রাণ বিলিন হলো।
বেলুনের মত ফুসফুসগুলো চুপসে গেল।
কৃষ্ণচূড়ার কচি কচি ডাল ভেঙ্গে খান খান,
ঝুর ঝুর লাল পলাশ ঝরে,
অশ্বত্থু পাতা উর্ধবমুখী ব্যথায় কাঁপে।
এ কথা যখন ছড়িয়ে পড়ল দমকা বাতাসে
শহরে শহরে,
প্রতি বন্দরে,
ক্ষেতে ও খামারে,
উল্কার মত ছড়িয়ে পড়লো
গোটা বাংলার নিভৃত কোণেঃ
শোন আজ শোন,
কে আছ তোমরা
রমনার পথ পিছল হলো।
কি এক ব্যথায় মূক হয়ে গেলো
লোকগুলো সব।
তারপর সেই জলভরা চোখ
দুই হাতে মুছে
চকমকি-ঠোকা আগুব জ্বেলে
আকাশ ফাটানো হাঁক দিয়ে গেলোঃ
শোধ চাই, এর শোধ চাই।
শ্রাবণ আকাশে কত জল আছে
তার বেশী জল মায়ের চোখে।
চৈতী হাওয়ার কত কথা জমা
তার বেশী কথা মায়ের বুকে।
মায়ের বুকের রুদ্ধ সে কথায়
প্রাণ দাও, আজ প্রাণ দাও।
ঝড়ের ডানায় ঝাপ্টা মেরে
দুলতে থাকুক মুক্ত কথারা।
নির্ভয়ে তারা আশ্বাস দিক
তোমার, আমার সবার মনে।
এই কবিতাটি ঐতিহাসিক। ১৯৫৩ সালের মার্চ মাসে শহীদ দিবসের প্রথম বর্ষ পূর্তিতে প্রকাশিত হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত “একুশে ফেব্রুয়ারি” সংকলনে এটি মূদ্রিত হয়।